Powered By Blogger

Friday, July 21, 2023

ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় - জাদু-বাস্তবতার এক আদি জনক?






জাদু-বাস্তবতা বা ম্যাজিক্যাল রিয়ালিসম (magical realism) বলতে আমাদের মূলত লাটিন আমেরিকা বা ইউরোপের কথা মনে পড়ে। এর শুরু হয়েছিল ল্যাটিন আমেরিকায়, কিউবান লেখক অ্যালেজো কার্পেন্টিয়ার এর হাত ধরে। তাঁর 'Kingdom of This World' কেই ম্যাজিক্যাল রিয়ালিস্ট ধারার প্রথম উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়। তার পরে আমরা এই জ্বঁরে (genre)/ধারায়  অনেক কাজই পেয়েছি - যেমন কলম্বিয়ার গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এর 'One Hundred Years of Solitude', 'Love in The Times of Cholera' ইত্যাদি; জার্মানির গুন্টার গ্রাসের 'The Tin Drum'; এবং ভারতীয় সলমন রুশদীর 'Midnight's Children', 'The Ground Beneath Her Feet' ইত্যাদি।


এই সব উপন্যাস গুলো থেকে জাদু-বাস্তবতার বিশেষত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা করা যায়। এগুলো কে জাদু-বাস্তবতার কয়েকটা মাপকাঠি বলা যায়। সেগুলো কি দেখা যাক:


১। উপন্যাস বা গল্প যাই হোক, তাতে লৌকিক এবং অলৌকিক পাশাপাশি থাকতে হবে, মানে দুটোরই অস্তিত্ব একই সঙ্গে থাকবে। জাদু হলেও তাতে একটা যৌক্তিকতা থাকবে, তা স্পষ্ট হবে, বাস্তবের মতোই তার পিছনে কার্য-কারণ থাকবে।

একটা উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে। 

যেমন, 'Alice in Wonderland' এ সেই ওয়ান্ডারল্যান্ড এক ভিন্ন জগত, এক খরগোশের গর্ত দিয়ে বাস্তব দুনিয়া থেকে সেখানে পৌছনো যায়। কাজেই সেটা এই প্রথম শর্ত পূরণ করছে না। তাই তাকে ম্যাজিক্যাল রিয়ালিসম বলা যাবে না ('অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড' জাদু-বাস্তবতার এক পূর্বসূরি)।

অন্যদিকে 'মিডনাইটস চিল্ড্রেন' এ একগুচ্ছ বাচ্চা ভারতের স্বাধীনতার ব্রাহ্মমূহুর্তে নানারকম অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। এই উপন্যাসের ঘটনাবলি প্রাক স্বাধীনতা থেকে স্বাধীনতা উত্তর সময় পর্যন্ত বিস্ত্রীত, পটভূমি ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। এখানে জাদুর উপত্তি স্বাধীনতার মাহেন্দ্রক্ষণে জন্মানো। এটা জাদু-বাস্তবতার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্তটা পূরণ করে, তাই একে এই কারনেম্যাজিক্যাল রিয়ালিসম এর একটা রোল মডেল হিসেবে ধরা হয়।

এর সঙ্গে পরাবাস্তব বা সুরিয়ালিসম (surrealism) কে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়; সেখানে সবসময় অলৌকিক বিষয় গুলো ততটা স্পষ্ট নয়, কার্য-কারণও ইচ্ছাকৃত ভাবেই ঘোলাটে, অবচেতন মন ও রূপকের খুব বড় ভূমিকা থাকে। বাস্তবতার ও যৌক্তিকতার ওজন সেখানে একটু কম। (আরো অনেক অন্যধরনের বৈশিষ্ট্য আছে, সেগুলো এই লেখায় আলোচ্চ্য নয়।)


২। প্রথম বৈশিষ্ট্য টা কেই এই ধরনের সাহিত্যের সংজ্ঞা বলা যেতে পারে। আরেকটা বৈশিষ্ট্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়; এই আখ্যানগুলো কোন এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং কিছু ঘটনাবলী কে তুলে ধরে। যেমন 'মিডনাইটস চিল্ড্রেন' এ স্বাধীনতা, দেশভাগ এবং ইন্দিরা গান্ধী আরোপিত ইমার্জেন্সির কথা পাওয়া যায়, 'দা টিন ড্রাম' এ ড্যানজিগ শহরের একটা লম্বা সময়কাল পাওয়া যায়, যাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন জার্মানির অধিগ্রহণ, হিটলার কৃত ক্রিস্টালনাচ (ইহুদি দের দোকান চুরমার করা, এক রাতের মধ্যে) এর উল্লেখ পাওয়া যায়। শুধু উল্লেখ বলা ভুল হবে, এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে উপন্যাসের বক্তব্য ও পাত্রপাত্রীরা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বলতে, সেটা রচনাকালের সমসাময়িক কিছু ঘটনাবলী নিয়েও হতে পারে। ভবিষ্যতে সেগুলো কে আমরা ঐতিহাসিক ঘটনা বলেই ধরব। পরের দিকে অবশ্য এই জ্বঁরেই কিছু কাজ পাওয়া গেছে, যার সঙ্গে ইতিহাসের সেইভাবে সম্পর্ক নেই। সেইজন্য, এই শর্তটা একেবারে বাধ্যতামূলক নয়।


৩। এই ধরনের সাহিত্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমালোচনা ও টিপ্পনি থাকে, যাকে স্যাটায়ারধর্মী (satire) বলা যেতে পারে। উপরোক্ত দুটো উপন্যাসের পটভূমিকা অনুযায়ী যে এরকমটা থাকবে, তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। মার্কেজ এর 'ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড' এ ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের উপর স্যাটায়ার আছে। তবে এর ব্যতিক্রম ও আছে বেশ কিছু, তাই একেও বাধ্যতামূলক শর্ত বলা যায়না।


এবার ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের (২২ জুলাই, ১৮৪৭- ৩ নভেম্বর, ১৯১৯) কথায় আসা যাক। উনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ওনার জীবন সংগ্রামের কাহিনী খুবই রোমহষর্ক, প্রায় রূপকথার মতো। তাঁর কর্মজীবন ও খুব বিচিত্র ছিল। কখনও হাতি ধরার দলে তো কখনও পুলিশের দারোগা। কখনও ইস্কুল মাস্টারের চাকরি, আবার কখনও ভারত সরকারের (ব্রিটিশ অধ্যুষিত ভারত) রাজস্ববিভাগের আধিকারিক। পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন, আবার শেষ জীবনে কলকাতা মিউজিয়মের বিভাগীয় অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। ভারত সরকারের প্রতিনিধি হয়ে ওনার ইউরোপ যাত্রারও সুযোগ হয়েছিল। এই সবকিছুর প্রভাবই হয়ত ওনার লেখার ওপরে পড়েছিল।

উনি ইংরেজি, ফারসি, ওড়িয়া, সংস্কৃত ইত্যাদি বহু ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তবে ওনার মাতৃভাষার প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা ছিল। শোনা যায়, এক সময় তিনি বাংলা কে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, অবশ্য সফল হননি।

     


এইরকম বিচিত্র অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষের লেখনীতেও বৈচিত্র্য পাওয়া যাবে, এটা প্রত্যাশিত।

একাধারে উনি ইংরেজি ভাষায় ওনার ইউরোপে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা, এবং অন্যান্য বিবিধ বিষয়ে বই লিখেছেন('A visit to Europe', 'Handbook of Indian Products'); উল্টোদিকে বাংলা ভাষায় চমকপ্রদ কল্পনাশক্তির পরিচয় দেওয়া উদ্ভট, অলৌকিক ও হাস্যরসাত্মক গল্প/উপন্যাস (যাকে weird fiction ও বলা যায়) লিখেছেন। বাংলা 'বিশ্বকোষ' এর সম্পাদনা করেছেন, প্রচুর প্রবন্ধও লিখেছেন। ওনার প্রথম উপন্যাস 'কঙ্কাবতী' প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৯২ খৃষ্টাব্দে। এই বইতেও উপরোক্ত কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, কিন্তু এর মুল কল্পনার জায়গাটা একটা স্বপ্নের 

মধ্যে ঘটে, তাই সেটা জাদু-বাস্তবতার প্রথম শর্ত পূরণ করেনা। তবে একে জাদু-বাস্তবতার পূর্বসূরি বলা যায়। ('Alice in Wonderland' বা 'Gulliver’s Travels' এর মতোই)। এই উপন্যাসের জন্য উনি প্রভূত সাধুবাদ পান। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ 'সাধনা' পত্রিকায় এই বইয়ের অনুকূল সমালোচনা প্রকাশ করেন। এর পর আর ওনাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। 




পরবর্তী সময়ে, ওনার এই ধরনের গল্প ও উপন্যাস একের পর এক প্রকাশ হতে থাকে। তাঁর লেখার এই ধরণ কে উনি আরও উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। এগুলোর মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ, 'ডমরু চরিত' উপন্যাস। এটা প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালে, ওনার মৃত্যুর চার বছর পরে। তাঁর এই অন্তিম সৃষ্টি, বাংলা সাহিত্যের জগতে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই পর্যায়ের কিছু অন্যান্য কাজের মতো এটাকেও একেবারে ম্যাজিক্যাল রিয়ালিস্ট জ্বঁরেই ফেলা যায়।


'ডমরু চরিত' বইটা ৭টা বড়গল্পের সমষ্টি। গল্পগুলোর মধ্যে ধারাবাহিকতা আছে(অর্থাৎ continuity), তাই সব মিলিয়ে একে একটা উপন্যাস হিসেবেও গন্য করা যায়। 

এই সব কটা গল্পেরই মূল চরিত্র ডমরুধর। সে একজন মাঝবয়সী বিত্তশালী মানুষ, একজন অ্যান্টিহিরো। অনেকগুলো গল্পেই বলা আছে, যে উনি একসময় গরীব ছিলেন, তারপর নানান উপায়ে এত বড়লোক হয়েছেন। সেই উপায়গুলো যে খুব আদর্শ নয়, সেটা বোঝাই যায়। ডমরুধর ধুরন্ধর, শঠ, হাড় কিপ্টে, দুশ্চরিত্র, কিন্তু দারুন রসবোধ আর গল্পে সবাইকে মাতিয়ে রাখতে পারেন। প্রত্যেক বছর পুজোর সময় দালানে বসে উনি ওনার বন্ধুবান্ধব কে ওনার জীবনের নানান চমকপ্রদ ঘটনা বলেন। এই ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই অলৌকিক, যেখানে মা দূর্গা, জমরাজ থেকে শুরু করে, চড়ুই পাখির আকারের মশা, ভালমানুষ ভূত ও আরব্য উপন্যাসের জিন এর কথাও আছে। এইগুলো নিয়েই মোট সাতটা গল্প। দ্বিতীয় গল্পে ওনার গরীব থেকে বড়লোক হবার কাহিনী আমরা জানতে পারি। বাকি গল্প গুলো বর্তমান (উপন্যাসের রচনাকালের পরিপ্রেক্ষিতে) সময়ের।


 



এবার জাদু-বাস্তবতার নিরিখে, প্রত্যেকটা উল্লিখিত মাপকাঠি দিয়ে, এই উপন্যাসকে বিশ্লেষণ করা যাক:


১। জাদু ও বাস্তবতার পাশাপাশি সহাবস্থান -

'ডমরু চরিত' অলৌকিক ব্যাপারে ভরপুর। এর সবই আমরা জানতে পারি ডমরুধরের মুখে। প্রত্যেক বছর পুজোর দালানে বসে তিনি নানান চমকপ্রদ অভিজ্ঞতার কথা শোনান; সেখানে সুক্ষ শরীরে জমালয়ে ভ্রমন এর কথা আছে, শরীরের নিম্নভাগ গরুতে পরিনত হবার কথা, শবসাধনা, এমনকি এক বিশেষ মন্ত্রের মাধ্যমে (জিলেট মন্ত্ৰ) আত্মার উদ্ধার করার উপাখ্যান ও আছে। তৃতীয় গল্পে উনি নিজেকে কার্তিকের অবতার বলে জাহির করেছেন। এক গনৎকারের কাছ থেকে নাকি তিনি এই গূঢ় সত্য জানতে পারেন। জ্যোতিষী বলেছিলেন, "বিবাহ করিবার নিমিত্ত একদিন আপনি মায়ের নিকট আবদার করিয়াছিলেন।  ভগবতী বলিলেন - বাচ্চা, এ দেবলোকে তোমাকে কেহ কন্যা প্রদান করিবে না। যদি বিবাহ করিতে সাধ হইয়া থাকে, তাহা হইলে পৃথিবীতে গিয়া অবতীর্ণ হও।" 

বেশিরভাগ গল্পগুলোতে পৌরানিক কাহিনী র যোগসুত্র আছে। আর আছে বাংলার লোককথার উল্লেখ। এই জাদুর পাশাপাশি বাস্তব নানান ঘটনাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিজের একটা পুরোনো বাড়িতে ইচ্ছাকৃতভাবে গুপ্তধনের সঙ্কেত পুঁতে রেখে, বাড়ির দাম বাড়িয়ে নেবার মতো ধূর্ততা, এর একটা উদাহরণ। দুটো দিকই অবিচ্ছেদ্য। 

এখানে জাদুর মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্য্য-কারণ সম্পর্ক আছে, সে মা দূর্গার আশির্বাদই হোক, নন্দীর অভিশাপই হোক, বা 'জিলেট' মন্ত্রই হোক।

ডুমরুধরের গল্পগুলো যে গাঁজাখুরি, সেই ইঙ্গিত ও অনেকবার দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় গল্পে উনি বলেন যে সরখেল মশাইয়ের বাড়িতে এক বৃহদাকার চুম্বকের সাহাজ্যে তাঁর লোহার সিন্দুক কে চোরেরা টেনে নিয়ে যায়। এই ঘটনা উনি নিজের চোখে দেখেছেন। তখন বন্ধু লম্বোদর বলেন - "এ তোমার আজগুবি গল্প। এ অনেক দিনের কথা, কিন্তু আমরা শুনিয়াছিলাম যে, সরকেল মহাশয়ের বাড়িতে যথার্থই চুরি হইয়াছিল, এবং সে চোরগন তোমার অপরিচিত লোক ছিল না"

এর উত্তরে ডমরুধর বলেন - " সমুদয় মিথ্যা কথা, হিংসায় লোক কি না বলে"।


এই কথোপকথন থেকে বোঝা যায় যে ডমরুধরের গল্পগুলো বানানো হতে পারে, এবং তার উদ্দেশ্য আসল ঘটনাকে চাপা দেওয়া। এই ব্যাপারটা অনেকটা আনরিলায়েবল ন্যারেশান (unreliable narration) এর মত। প্রশংগত, 'দা টিন ড্রাম' এও এই ধরনের বিষয় আছে। এই উপন্যাসের মূল চরিত্র অস্কার, যেগুলো পাঠকদের জানাচ্ছে, সেগুলো যে পুরোটাই কল্পনা হতে পারে, (অলৌকিক ব্যাপারগুলো) সেরকম কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এটা ম্যাজিক্যাল রিয়ালিসম এর পরিপন্থী নয়। কাজেই সব দিক থেকে বিচার করলে 'ডমরু চরিত' জাদু বাস্তবতার প্রথম শর্ত পূরণ করছে।


২। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট -

এই বইয়ের রচনাকাল ১৯১০ দশকের শেষের দিকে। তাই, এতে সেই সময়ের কথা বিভিন্ন জায়গায় চলে আসে। এসময়ের বিলেতযাত্রা নিয়ে গোঁড়ামি(সপ্তম গল্পে - ডমরুধরের বন্ধু ঢাকমশাই এক যায়গায় তাঁর জামাইয়ের উদ্দেশ্যে বলেন, "কিছুতেই আমার কন্যাকে ও দৌহিত্রকে তাহার বাড়ি পাঠাইব না। সে সমুদ্র পার হইয়া বিদেশে গমন করিয়াছে। তাহার জাতি গিয়াছে"), ইংরেজি কে মাতৃভাষার তুলনায় উচ্চস্থানে রাখার মানসিকতা(পঞ্চম গল্পে - "সেই যাহারা ইংরেজিতে বক্তৃতা করেন, যাঁহাদের বক্তৃতা শুনিয়া স্কুল-কলেজের ছোঁড়াগুলো আনন্দে হাততালি দিয়া গগন ফাটাইয়া দেয়, আমরা সেইরূপ দুজন বক্তা জোগাড় করিয়াছিলাম") এবং দেশপ্রেমের ধুয়ো তুলে লোক ঠকানোর উদ্দেশ্যে স্বদেশী কোম্পানি খোলা ইত্যাদির কথা আছে। (পঞ্চম গল্পে - ডমুরুধর, শঙ্কর ঘোষ নামে একজনের সাথে একটা স্বদেশী কোম্পানি খুলেছিলেন। কোম্পানির উদ্দেশ্য পুরোপুরি অবাস্তব - এঁটেল মাটি থেকে কাগজ বানানো। কিন্তু তাঁরা ভাল বক্তা এনে এরকম অসম্ভব জিনিসকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পেরেছিলেন। ডমরুধরের কথায়, " আমাদের কোম্পানির নাম হইল - 'গ্র‍্যান্ড স্বদেশী কোম্পানি লিমিটেড'... বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, যে ব্যাক্তি একশত টাকার শেয়ার বা অংশ কিনিবে, প্রতিমাসে লাভস্বরূপ তাহাকে পঁচিশ টাকা প্রদান করা হইবে।...প্রথম প্রথম শত শত লোকে শেয়ার কিনিতে লাগিল। হুড় হুড় করিয়া টাকা আসিতে লাগিল।...কয়েক মাস গত হইয়া গেল। শঙ্কর ঘোষ এঁটেল মাটি দিয়া একখানিও কাগজ প্রস্তুত করিলেন না। মাসে যে পঁচিশ টাকা লাভ দিবার কথা ছিল, তাহার একটি পয়সাও কেহ পাইল না। আসল টাকার মুখও কেহ দেখিতে পাইল না।...অনেকগুলি টাকা লোকে দিয়াছিল। বলা বাহুল্য যে, সে টাকাগুলি সমুদয় আমি লইলাম।") 

বইটা পরে প্রকাশিত হলেও, এর সময়কাল নির্ধারণ করা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একটা বিশেষ উল্লেখ থেকে। সপ্তম ও শেষ গল্পে এক জায়গায় আছে, ডমরুধরের বন্ধু ঢাকমশাই এর (ডমরুধরের কথায় যিনি গুরুগিরি করেন) কিছু উচ্চশিক্ষিত শিষ্য তাঁকে বলছেন, "মহাসংগ্রামে পৃথিবী টলমল করিতেছে। জর্মনদিগকে যদি সম্পূর্ণ পরাজিত না করা যায়, তাহা হইলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর ঘোর অনিষ্ট ঘটিবে।" এর থেকে কাইসারের নেতৃত্বে জার্মানির আগ্রাসন (১৯১৮ পূর্ব) এর কথা বোঝা যায়। (ত্রৈলোক্যনাথের জীবনকালে উনি একটাই বিশ্বযুদ্ধ দেখেছিলেন।) যেহেতু এই উপন্যাস একটা নির্দিষ্ট সময়ের কথা তুলে ধরে (সেটা লেখকের অনুপাতে বর্তমান সময় হলেও), এবং তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও ঘটনাবলীর প্রতি ইঙ্গিত করে, তাই, এটা দ্বিতীয় শর্তটাও পূরণ করছে।


৩। স্যাটায়ার -

ত্রৈলোক্যনাথের সব রচনার মতো এতেও প্রচুর স্যাটায়ার রয়েছে।

প্রথম গল্পে ডমরুধর সন্যাসীর ষড়যন্ত্রে সূক্ষ্ম শরীরে তাঁর স্থুল শরীর থেকে নির্গত হন, ও সন্যাসী তাঁর শরীরে প্রবেশ করেন। এই সঙ্কট থেকে ডমরুধর কিভাবে মুক্তি পান, সেটা প্রথম গল্পের বিষয়। যাই হোক, সূক্ষ্ম শরীরে ডমরুধর উপরে উঠতে উঠতে অবশেষে যমালয়ে গিয়ে পৌঁছোন।

সেখানে তিনি দেখেন, বৃন্দাবন গুঁই নামে একজনের বিচার চলছে। তাঁর সম্বন্ধে চিত্রগুপ্ত যমরাজকে বলছেন - "মহাশয়! এ লোকটি অতি ধার্মিক, অতি পুন্যবান। পৃথিবীতে বসিয়া এ বার মাস তের পার্বন করিত, দীন-দুঃখীর প্রতি সর্বদা দয়া করিত, সত্য ও পরোপকার ইহার ব্রত ছিল।"

এ কথা শুনে যমরাজ বললেন - "চিত্রগুপ্ত! তোমাকে আমি বারবার বলিয়াছি যে, পৃথিবীতে গিয়া মানুষ কি কাজ করিয়াছে, কি কাজ না করিয়াছে, তাহা আমি বিচার করিনা। ব্রহ্মহত্যা, গো-হত্যা, স্ত্রী-হত্যা করিলে এখন মানুষের পাপ হয়না, অশাস্ত্রীয় খাদ্য খাইলে মানুষের পাপ হয়। তবে শিবোক্ত তন্ত্রশাস্ত্র মতে সংশোধন করিয়া খাইলে পাপ হয়না।" অনেক প্রশ্নোত্তরের পর জানা গেল বৃন্দাবন একাদশীর দিন একবার পুঁইশাক খেয়ে ফেলেছিলেন। এই শুনে যমরাজ খুব ক্ষেপে গেলেন। বললেন - "সর্বনাশ! করিয়াছ কি! একাদশীর দিনে পুঁইশাক। ওরে এই মুহূর্তে ইহাকে রৌরব নরকে নিক্ষেপ কর। ইহার পূর্বপুরুষ, যাহারা স্বর্গে আছে, তাহাদিগকেও সে নরকে নিক্ষেপ কর। পরে ইহার বংশধরগনের চৌদ্দ পুরুষ পর্যন্তও সেই নরকে যাইবে। চিত্রগুপ্ত! আমার এই আদেশ তোমার খাতায় লিখিয়া রাখ।"

এইধরনের ব্যঙ্গের পিছনে, সেইসময়ের উঠতি গোঁড়া হিন্দুত্ত্বের প্রতি তীর্জক মন্তব্য আছে। অনেকের কাছেই, একজনের কর্মের থেকেও, সে কি খায় সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, এবং এ ব্যাপারটা যে কতটা হাস্যকর ও অযৌক্তিক, তা এই কৌতুকের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন লেখক।(এটা আমাদের বর্তমান সময়েও বেশ প্রাশঙ্গিক হয়ে উঠেছে)

শেষ গল্পে, এক জায়গায় ডমরুধরের বন্ধু ঢাকমশাই তাঁকে পরামর্শের জন্যে ডাকেন, তাঁর আঠ বছরের বিধবা মেয়ে কুন্তলা, জ্বরে পড়েছে তাই। তবে জ্বরের জন্য না, তাঁর কাছে ধর্মরক্ষাই প্রধান চিন্তা। তিনি বলেন - "আজ একাদশী। বিধবা। সেই জন্য জল দিতে বারণ করিয়াছি। কিন্তু জল দিতে আমার গৃহিণীর ইচ্ছা। এখন করি কি? সেইজন্য তোমাকে ডাকিতে পাঠাইয়াছিলাম।" এর উত্তরে ডমরুধর বললেন - "বাপ রে! জল কি দিতে পারা যায়? ব্রাহ্মণের ঘরের বিধবা। একাদশীর দিন জল খাইতে দিলে তাহার ধর্মটি একেবারে লোপ হইয়া যাইবে।"

ঢাকমশাই তাই করলেন। এমনকি কেউ যাতে দয়াপরাবশ হয়ে কুন্তলা কে জল না দিতে পারে, সেইজন্য তাকে নিচের ঘরে তালাবন্ধ করে রাখলেন। পরেরদিন সকালে কুন্তলা মারা গেল। এই ঘটনার জন্যে সবাই ছিঃছিক্কার করবে, এটাই আমরা ধরে নেব। কিন্তু, তার পরেই বলা আছে, এই ঘটনার কথা যখন প্রচার হল, তখন সবাই ঢাকমশাইয়ের এই ধর্মনিষ্ঠার জন্য ধন্য ধন্য করতে লাগল। তারা বলল - "কি দৃঢ় মন! কি ধর্মের প্রতি আস্থা, এরূপ পূণ্যবান লোক কলিকালে হয় না।"

এটাকে কালো হাস্যরস (Black Humour) এর উদাহরণ স্বরূপ ধরা যেতে পারে। স্যাটায়ার তো অবশ্যই। এটুকু ছোট্ট জায়গার মধ্যে ত্রৈলোক্যনাথ বুঝিয়ে দিলেন, সেই সময়ে বাল্যবিবাহের চল ছিল, এবং বিধবাদের (স্বাভাবিক  ভাবেই বাল্যবিধবা দেরও) জন্যে কি ধরনের নিষ্ঠুর নিয়ম ছিল। এবং বৃহত্তর সমাজ, তার বিরোধিতা না করে বরং তা নিয়ে আস্ফালন করত। এ সবই হত ধর্মের নামে। (মূলত বাল্যবিধবা দের দূর্দশা দেখেই বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ চালু করার ব্রত নিয়েছিলেন। প্রশঙ্গত, 'কঙ্কাবতী' তে বিদ্যাসাগরের উল্লেখ আছে, এবং এও বোঝা যায় যে লেখক এই আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন।)


যে উদাহরণ দুটো দেওয়া হল, তার মধ্যে সাদা ও কালো বিদ্রুপের মাধ্যমে লেখক সামাজিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন। এইরকম, এই বইয়ের ছত্রে ছত্রে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এটা  তৃতীয় শর্তটাও পূরণ করছে।


জাদু-বাস্তবতার বৈশিষ্টের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে প্রথম শর্তটা পূরণ করলেই, একটা সাহিত্য কে ম্যাজিক্যাল রিয়ালিস্ট বলা যায়। সেখানে, 'ডমরু চরিত' এই তিনটে শর্তই পূরণ করছে। কাজেই এটা একটা জাদু-বাস্তব ধারার সাহিত্য।


পরিশেষে, এই লেখার শিরোনাম এর যৌক্তিকতা নিয়ে বলতে হয়। 'ডমরু চরিত' এর আগে, ত্রৈলোক্যনাথেরই 'নয়নচাঁদের ব্যবসা' বলে একটা বড়গল্পেও এইধরনের সব বৈশিষ্ট্যই আছে। তাই সেটাও একটা্রর ম্যাজিক্যাল রিয়ালিস্ট ঘরানার কাজ, সম্ভবত প্রথম। ত্রৈলোক্যনাথের এই সাহিত্যকর্মের আগে, এইধরনের নজির যে একেবারেই নেই, তা নয় অবশ্য। ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'লোকরহস্য' বইতে, 'সুবর্ন গোলক' বলে একটা ছোটগল্প আছে, যাকেও জাদু-বাস্তবতার একটা উদাহরণ বলা যেতে পারে। তবে বঙ্কিমচন্দ্র এই ধরনের আর কোন গল্প বা উপন্যাস লেখেননি। বিশ্বসাহিত্যের নিরিখে ওনেকেই দাবি করতে পারেন যে নিকোলাই গোগোল এর ছোটগল্প, 'The Nose' (১৮৩৬ সালে প্রকাশিত), বা ফ্রাঞ্জ কাফকার লেখা উপন্যাস 'The Metamorphosis' (১৯১৫ সালে প্রকাশিত) এর মধ্যেও ম্যাজিক্যাল রিয়ালিসম এর বৈশিষ্ট্য আছে। তবে সাহিত্যের ইতিহাসে এগুলো কে পরাবাস্তব ও স্যাটায়ার ধর্মী লেখা বলেই গন্য করা হয়। এমনকি বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক এডগার অ্যালান পো'র (১৮০৯ - ১৮৪৯) কিছু ছোটগল্প কেও এই জ্বঁরে ফেলেন অনেকে। তবে, সেগুলোতে ম্যাজিক্যাল রিয়ালিসম এর ছোঁয়া থাকলেও, আধুনিক জাদু-বাস্তব সাহিত্যের নিরিখে, সেগুলো একটু অন্যরকম। এ নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে।


আরেকজন লেখকের কথা না বললেই নয়। ফ্রাসোয়া ড়াবেলে (Francois Rabelais) নামের এক রেনেসা যুগের ফরাসি লেখকের 'Gargantua and Pantagruel'  সিরিজের উপন্যাস গুলোতে এই ধরনের উপকরণ, প্রচুর পাওয়া যায়। এই বইগুলোর আরেক বৈশিষ্ট্য, তার weird fiction হয়ে ওঠার প্রবৃত্তি। বইগুলো পড়লে বোঝা যায়, যে ত্রৈলোক্যনাথ সম্ভবত এগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছিলেন, এবং এর অনুপ্রেরণা তাঁর ডমরু চরিতে (ও অন্যান্য কিছু লেখায়) ভীষণভাবে পাওয়া যায়। 




এরও আগে রোমান যুগের লেখক অ্যাপিউলিয়াস (Apuleius) এর ''The Golden Ass' এর মধ্যেও এই ধরনের উপাদান পাওয়া যায়। সুত্র খুঁজতে গেলে হয়ত আরো পিছোনো যায়, এর কোন শেষ নেই। এই ধরনের কাজ কে প্রাচীন বলা যায়, তাই এদেরকে আধুনিক সংজ্ঞা অনুযায়ী ম্যাজিক্যাল রিয়ালিসম বলা যাবে কিনা, সেটা নিয়ে পর্যালোচনা হতে পারে। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করে বলা যায় যে, ত্রৈলোক্যনাথের উল্লিখিত রচনাগুলোর মধ্যে আধুনিক জাদু-বাস্তবতার সব কটা বৈশিষ্ট্যই পাওয়া যায়। এগুলো সেই উপাদান, যেগুলোর জন্য অ্যালেজো কার্পেন্টিয়ার এর 'কিংডম অফ দিস ওয়ার্ল্ড' কেই প্রথম ম্যাজিক্যাল রিয়ালিস্ট উপন্যাস বলে ধরা হয়। এটা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। অর্থাৎ, 'নয়নচাঁদের ব্যবসা' এবং 'ডমরু চরিত' লেখা ও প্রকাশের সময় অনুযায়ী ত্রৈলোক্যনাথ কে জাদু-বাস্তবতার একজন আদি জনক বললে, খুব একটা অত্যুক্তি হবেনা।


দুঃখের বিষয়, এই অসাধারণ সাহিত্যিকের কাজ, এমনকি তাঁর নামের সঙ্গেই এখন আর অধিকাংশ বাঙালির পরিচিতি নেই। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে, যদি এই বিস্মৃত লেখক ও তাঁর কাজের ব্যাপারে পাঠক ও বিশেষজ্ঞদের আগ্রহ তৈরি হয়, তাঁর সাহিত্যের পূনর্মূল্যায়ন করার ব্যাপারে যদি তারা সচেষ্ট হন, তবেই এই প্রবন্ধের স্বার্থকতা।


তথ্যসূত্র:


১। ত্রৈলোক্যনাথ রচনাবলী - কামিনী প্রকাশনালয় 

২। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় - Wikipedia

৩। এ কোন ত্রৈলোক্যনাথ - আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন

৪। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় : বিস্মৃত বই বিস্মৃত লেখক – আবদুশ শাকুর


বিঃদ্রঃ- এই প্রবন্ধটি পুর্বে শারদীয়া ভার্গভী তে ছাপা হয়েছিল।

Thursday, December 24, 2015

The Broken Cloud - A Commendable Effort


‘Poetry is a sword of lightning, ever unsheathed, which consumes the scabbard that would contain it’, said none other than the famous English poet Percy Bysshe Shelley. ‘Like a glorious conqueror it has, since the creation of the world, received the tribute and admiration in every land – from the savage – the homeless wanderer of the mighty forest-to the son of civilization luxuriating in the midst of refinement’ – wrote the eminent poet and dramatist Michael Madhusudan Dutta in one of his essays regarding poetry. The earliest form of poetry was born through folk songs and the need to retell oral epics. Poetry has since then evolved and transformed through the ages. Aestheticians have identified three major genres: epic poetry, lyric poetry, and dramatic poetry. While the epic and dramatic poetry belong more to the past ages, lyric poetry is the form that has been most abundant in the modern times. This genre, which expresses ones emotions and feelings and constitutes primarily of the personal purview of the poet has perhaps gained more importance in our times because of a massive change in the way of life. They can further be sub divided into sub-genres like prosaic poetry, light poetry, speculative poetry etc. 


Women have made great contributions to poetry throughout the ages – be it Sappho or Christina Rosetti. Poetry by women, especially lyric poetry offers a point of view of life quite different from that of male poets. Leafing through Sridatta Gupta’s poetry compilation titled, ‘The Broken Cloud’ stresses this woman’s point of view to a certain extent. However, many of the poems are of an ambiguous nature and can be applicable for a men as well as women


The compilation begins with a sweet and nostalgic poem ‘Those Days’. This poem emulates the sweet reminiscences of the days spent with the loved one in a refreshing tone, without any hint of melancholy. It stresses the strength in memories and their power to sustain life even after the loved one has departed. The next poem ‘Unpacked Memories’ continues in the same spirit and talks about the pleasant memories of togetherness brought up by the thought of moving from an old abode. The tone shifts in the poem ‘Alive’, which has a distinct echo of feminism. The poet voices a modern woman who is independent, confident and raises her voice against the patriarchal prejudices that demean women. This women’s perspective is also reflected in the poems like ‘She – A Mystery’, which celebrates the unfathomable mystery of being a woman; ‘Domestic Lore’, which voices a homemaker and describes her activity all over the day in a joyous spirit; ‘They Never Came Back’, which is from the point of view of a public woman who recounts the momentary intimacies with her clients and sadly reflects that they were only temporary. There is another interesting set of poems that cater to personifications. The poem ‘I stand Tall’ gives voice to a tree, while ‘Breath of Life’ describes the feelings of an unborn child just before it is going to be born, very scientifically, yet poetically.  Similarly ‘Unheard sobs’ refer to the road or in a larger sense the earth which is tired with the torture of vehicles and human civilization. These poems are in the first person. A slight variant of these are poems like ‘Journey’, which depicts the journey of a river from its point of origin to the sea, in second person, which in a way acts as a metaphor for life itself; ‘Though art superior’, which portrays time as the supreme reality; ‘Counting my blessings’, in which the poet compares herself to a tree that stands all alone on the roadside and realizes that she is much better off, since she has people whom she can share her life with, making it an interesting application of Gandhiji’s talisman.  There is another set of poems that deal with metaphors. For e.g: in the poem ‘Broken Kites’, the flying kites act as a metaphor for dreams. Some of them snap, some get entangled yet some soar to new heights. In ‘Youth’s Sunset’, the progression of morning into evening and eventually night act as metaphors for the different phases of life – youth, middle age and old age. In ‘Grain of Sand’, sand is compared to youth and flying sand to the vitality of life. In the poem ‘Love’s Mekhla’, The poet is fascinated by the skill of craftsmen looming a Mekhla saree and compares the intricate craft of weaving bits and pieces of string to that of building a relationship. There are some poems that are of a very personal nature, and are the fruits of observations and realizations of the poet. ‘I say its unfair’ touches upon the theme of Confucius’s Golden Rule, contemplating the fact that we complain of someone’s bad behavior but do not comprehend the fact that we may have similarly with others. In the poem, ‘Mysteries of Life – An Open book’, the poet recollects her worst fears but realizes that living in fear ends the life before it even begins and resolves to live it to the fullest. There are also poems on varying tones that cannot be categorized as such. Notable among them are ‘A stranger in strangeness’, which celebrates an unnamed relationship with someone who is a friend yet more than a friend, one who shines brightly in the memories of days gone by, which is something many of us can relate to; ‘I do I do’, which expresses the joy of getting into a commitment and the sorrows of it turning sour and thus portrays a harsh reality of our age; ‘Yesterday Night It Rained’, which is a descriptive as well as lyrical poem describing the  sights and sounds of rain that evoke a deep nostalgia. The title poem, ‘The Broken Cloud’ emphasizes the spirit of moving on. The broken cloud represents the attachments to the past which are difficult to get rid of. But once that is accomplished, the wounds are healed giving rise to new hope. This is indeed a good choice for the title of the book. But perhaps the best poem in the collection is ‘Writer’s Block’. This poem depicts the writer’s block and the way she overcomes it. Hence the process of writing the poem becomes the poem itself, making it an interesting application of Poioumena in poetry. Although this has precedents, it is nonetheless praiseworthy. This poem can also be thought of an example of Immanuel Kant’s ‘Ding an Sich’, or the ‘thing-in-itself’.



The poems are mostly of a lyrical nature. Some of the verses rhyme, while some are in free verse. However the rhyme or lack of it seems to be very much in tune with the mood of each poem. The choice of words is also apt. The arrangement order of the poems is thoughtful. The illustrations by Sukhada Sahasrabuddhe perfectly compliment the poetry.



Overall ‘The Broken Cloud’ is a commendable effort by debutante poet Sridatta. I wish her all the best for her future endeavors.




Wednesday, March 11, 2015

Om Dar Ba Dar : A Pioneer in Indian Avant – Garde



 “Forget Bunuel, Jodorowsky or Warhol for a while! If there’s a single Indian film that draws you towards mind-blowing realm of post modernist…absurdist…surrealist blast to the senses, here’s the cult made by Kamal Swaroop.” This had been the reaction of one of my facebook friends(Hiren Dave), after watching Om Dar Ba Dar. This is considered to be a groundbreaking film in Indian cinema, pertaining to the avant-garde genre.
The term avant-garde film refers to the genre of innovative and experimental cinema. Avant-garde as a film movement started in Europe in the early 20’s notably among filmmakers like Rene Clair, Man Ray, Duchamp etc. In 1929 film auteur Luis Bunuel in collaboration with artist Salvador Dali created a short film ‘Un Chien Andalou’, that would become a benchmark for avant-garde films all over the world. The genre gradually spread to other parts of the world and resulted in various flavors of experimental filming. This was possible because avant-garde did not restrain itself to any particular format, rather opened up a boundless arena for experimentation on celluloid.
India did not lag far behind. Though avant-garde did not emerge as a major movement during the Indian New Wave, there have been attempts at experimental cinema since 1969(Uday Shankar’s ‘Kalpana’(1948) did contain elements of avant-garde, however, it is debatable whether it could be called a full fledged avant-garde film). However the first feature length film that could be classified as avant-garde (though not necessarily synchronous with the avant-garde movement) came in 1988 from the hands of an auteur known as Kamal Swaroop. ‘Om Dar Ba Dar’, was also the first avant-garde film to get national and international recognition and is still widely viewed and discussed among film enthusiasts.
Kamal Swaroop, a 1974 graduate from FTII Pune had previously worked on a collaboration project, ‘Ghasiram Kotwal’(1976) with the likes of Mani Kaul and also assisted Richard Attenborough during filming of Gandhi’(1982). ‘Om Dar Ba Dar’ was his first solo film. Its release was preceded by a huge controversy in the censor board. However, it won Filmfare Critics Award for the Best Film in 1989. Today, after 20 years of its release, this film has attained a cult status

Kamal Swaroop
 The film is a satirical representation of Indian life as a whole. However, this statement fails to give any insight into the film that is absurdist to the core. It eludes conventional narrative structure in general and comprises of a series of psychedelic and non-linear imagery that does not attempt to make sense on a whole. It rather comes across as a deconstruction of collective meaning.
At this point, I would try to give a brief overview of what distantly resembles a plot for the film. Om(Manish Gupta/Aditya Lakhiya) lives in Ajmer. His father Veer Shankar(Lakshminarayan Shastri), who is referred throughout the film as Babuji, is a retired government employee cum astrologer. After Om was born, Babuji discovered that he was destined to die at the age of 18 years, from his horoscope. He named the newborn child Om in an attempt to evade the agents of death, since he believed that the sound of ‘Om’ has never been heard in the jamalok. Om’s elder sister Gayatri(Gopi Desai) considers herself equal in stature to men and sits in men’s section of theatre to emphasize this. Jagdish(Lalit Tiwari), a young man shifts to Ajmer from Jhumritalaiya. He falls for Gayatri when he spots her bold demeanor in the cinema hall. He is further elated to discover that he and Gayatri have been requesting the same song on radio for years. Om meanwhile gains popularity in school due to his ability to hold breath underwater for a long time. Babuji buys Gayatri a bicycle. Jagdish takes the task of teaching her how to ride it. They come closer. Om celebrates a friend’s birthday at a terrace on the same night that Neil Armstrong and his crew land on the moon.
As days pass, we see Babuji setting up an astrology centre in his home and Jagdish becoming his typist. Gayatri also helps Babuji in receiving clients and carrying out the business.



Om has grown into a teenager. He is interested in science as well as mystics and occult and has a fascination for frogs. A lady named Phoolkumari(Anita Kanwar) arrives to consult Babuji. Since she is unable to pay them money, Babuji and Gayatri decide to appoint her as a typist, citing that Jagdish’s spelling is bad. This enrages Jagdish and he breaks off contact with them.
Om is in an adolescent phase and is attracted to Phoolkumari. Lala Lotamal, a businessman on fearing an approaching war; hides his diamonds in the soles of a pair of his shoes and gives it to Babuji for safekeeping.



 Meanwhile, Jagdish visits Gayatri. She compels him to get involved physically with her. One day, Om runs off wearing the shoes with diamonds, unknowingly. Babuji suspects Phool and she puts a curse on him which would make him unable to leave his room forever. Om arrives at Lotamal’s private land where some of the diamonds fall off and are swallowed by frogs. When Lala Lotamal comes to claim the diamonds, Babuji convinces him that he has crushed the diamonds and mixed it in the food he is being served. He also instructs Lalaji to hold his bowels for fifteen days and defecate in his land on the night of full moon in order to sow an unlimited supply of diamonds. He also warns him that if anyone sees him in the process, that person should not see anyone else till morning. Lalaji goes to his own land on full moon night in order to comply. Om spots him in the act. Lalaji remembers Babuji’s advice and appoints Om as the guardian of his land. Om starts supplying frogs to a local girls’ school for biology practical lessons.

When these frogs are dissected in the Biology class, the girls discover diamonds in them. The word spreads and leads to a frog-hunt on Lalaji’s land by a mob, in search of diamonds. Though the diamonds have actually fallen off from Om’s shoes, Lalaji believes that they have come from his feces. Lalaji tries to stop this and is shot.

 
When Om returns home, Babuji tries to catch him. In the process he crosses the verandah and dies due to Phool’s curse. Om arrives at Pushkar. A local Brahmin discovers his ability to hold breath underwater and plans to utilize it for moneymaking. Since the time of Pushkar festival is approaching, he convinces Om to do his breath holding trick every night at 12. This brings a mass of pilgrims to the lake every night. The media also get interested in this event and various brands use Om to promote their products. The people are inspired by Om’s feats and decide to hold their breath along with him as a movement. Om’s discussion with his friend leads him to believe that since his nature is to hold breath, he should breathe once in order to participate in the peoples’ movement(A Saans a ra andolan). He dies underwater when he tries to breathe and his dead body floats up.
Jagdish comes to visit Gayatri after a long time and finds that she has given birth to a child(presumably a result of their lovemaking). He pleads for forgiveness and Gayatri finally obliges. In the end they contemplate suicide by taking potassium cyanide(KCN) and plan to let the world know about its taste. Jagdish takes it first and instructs Gayatri to take down the taste of KCN, since he is weak at spelling. He utters “Gobar”(implying that KCN tastes like cow dung)  before dying. Gayatri changes her mind, abandons the suicide plan and returns home in a bike.


Though the above summary seems logical and linear, the actual treatment is far from it. Many parts of the plot come in reverse and juxtaposed sequences with respect to time. For instance the event of Om arriving at Pushkar is shown before he meets Lotamal in his land. Also the sequence of Lalaji coming to console Gayatri after his father’s death is shown after the sequence of him being shot dead during the frog-hunt. However, such non-linearity is perhaps the least of befuddling elements in the movie.
As mentioned before, the film does not have a collective meaning, a fact that aligns it with the principles of absurdism (human beings’ inability to comprehend an absolute meaning in the universe). However, characteristics or symbolisms can be discerned if we look at the movie in parts. Indeed, the film contains a myriad of varying themes and traits referenced at multiple junctures in the narrative/anti-narrative.
My attempt would be to enumerate some such key elements of this unique film:

  • Examples of non sequitur logic(e.g: all a’s are b’s) are strewn throughout the movie. One example that comes to my mind is towards the beginning, when Gayatri asks Om, “Tujhe kaise pata barish hone wali hai ?”(How do you know it is going to rain?) and Om replies “Tu Kangi jo kar rahi hai”(Because you are combing your hair). Many of the dialogs in the film follow this pattern. Besides this, many of the dialogs are deliberately incoherent and incongruous to produce a nonsensical effect.
  • Another central theme of the movie is the effortless intertwining of science, religion and superstition in Indian life. When Gayatri asks, “Kya koi ladki ladke ke bina Everest chad sakti hai?”(Can any woman climb the Everest without the help of a man?); Jagdish replies, “Parvati ji Chadi Thi”(Godess Parvati did). Again when Gayatri says, “Suna hai chand pe nani ka post khali hai”(I’ve heard that the post of the old lady on moon is vacant), Jagdish in turn asks, “Tum kat leti ho?”(Can you sew?) . The chand ki nani is referenced again on the day when man lands on the moon. Amidst the celebration on the terrace, we see a woman with white hair smiling just when the time of the moon landing arrives.These aspects may seem to be abstract amalgamations, however if we think how science, religion and superstition serve as driving factors for an average Indian citizen, this treatment assumes a very significant relevance.
  •  Gayatri’s part in the movie is perhaps the only linear aspect in the whole film and integrity can be found between the fragments of the narrative relating to her. This is perhaps because views on women’s liberation come through her. She considers herself equal to men and sits in the men’s section of movie theaters, rides a bicycle etc to prove it. In one sequence, she asks Jagdish to make love to her. When Jagdish fumbles with the strings of his underwear, it is Gayatri who brings the scissors and cuts the string. Their lovemaking is portrayed through a humorous metaphor. We see Babuji calling out Gayatri’s name and cycling to and fro in front of their house. Here Babuji is physically not present, rather is a symbolism for the patriarchal inhibition, seemingly for protecting a woman’s virtue before marriage. Babuji collapsing with the cycle signifies the event of Gayatri’s capsizing this inhibition.
  • The scenario of a woman asking for sex rather than succumbing to a man’s desire was seldom seen in the cinema of that time. This is one of the aspects among others, which illustrates that Kamal Swaroop’s masterpiece was much ahead of its times. The director has maintained an egalitarian outlook throughout the movie. Thus, Gayatri gives birth to a child without marriage and raises her alone. Towards the end Jagdish takes Gayatri along to the edge of a cliff in the attempt to commit suicide by tasting KCN. He mentions about udna or flying together. However, we witness, only Jagdish taking KCN and dying. Gayatri changes her mind and returns on a scooter, as a strong departure from Bollywood love stories depicting the hero and heroine dying together. Here the flying becomes a double ended metaphor, one for suicide and the other for Gayatri’s liberation.
  • The sequences involving Om comprise of the most bizarre and abstract imagery in the whole film, be it the dream sequence hinting at his fear of examination (biology), or the ‘Rana Tigrina‘ song. Om’s fetish with frogs is evident from the sequence of this song ending with Om supposedly gripping the picture of an attractive woman and the sequence where a dead frog is referred to as ‘ladki ki laash’(Corpse of a lady). This could be a subtle hint towards zoophile tendencies. Om’s comment about his growing nose obstructing his view(“Jab bhi mai padta hun, naak akshar kha jaate hai”) and the fact of his nose bleeding, is an indicator of the fact that Om has grown up, reached an adolescent age. Phoolkumari puts her black glasses on his eyes, which she claims would enable him to read properly.
  • These simplistic scenarios in my opinion represent Om’s adolescent craving and the sexual undercurrents between Phool and Om. Interestingly, these are not represented through Freudian symbolisms, which is generally a favorite of filmmakers. The director rather conjures up an assemblage of unique metaphors for this and many other instances in the movie.
  • The Pushkar Lake, that plays a significant part in the movie is a place of immense religious importance for the Hindus. In the texts of Padmapurana, it has been described as the place where Brahma had once held a jagna. Consequently, this is the only place to have a temple dedicated to Lord Brahma. It is believed that people who take a dip in the Pushkar during the time of Karthik Shukra Paksha(Full Moon), supposed to be the time of the year corresponding with Brahma’s jagna, wash away their sins and open the gates of heaven in their afterlives. The opening of the Pushkar festival is declared through the statement “Swarg dharti par utar chuka hai”(The heavens have descended to earth) delivered in an airlines announcement-like tone. It is during this time that Om’s magical feat in the Pushkar is put up as a moneymaking prospect for the local Brahmin. The reference of the ‘Promise’ toothpaste(a brand which was available back then) stresses the use of religious platforms for advertising. The use of God as a brand is equally relevant in our times.
  •  Songs have been an integral part of any Indian movie, since inception. The avant-garde songs of ‘Om Dar Ba Dar’ play a very important part in this avant-garde movie as well. The song played on radio is an attempt towards nonsense verse. The song ‘Meri Jaan AAA’ is partly in English, illustrating the English speaking tendencies of the youth and is  a reflection of urban men’s outlook toward women in the then India. ‘Rana Tigrina’ depicts the adolescence of Om and his fascination with frogs.  The lyrics by Kuku and the music by Rajat Dholakia are very appropriate.

One could go on an on writing about this movie; there is so much to write and so much yet to discover. Every time I watch this movie, I find an unexplored nook, a new aspect which I had previously overlooked. Even after all these years, Kamalji gets emails, messages and posts in facebook(he is active in facebook, by the way) from fans of this movie and he is very earnest in replying back to them and discussing about his movie. I was fortunate to have interacted with him on facebook and resolved various doubts about ‘Om Dar Ba Dar’. There are a considerable number of people, who want this movie to be remastered and released with English subtitles. However, when I mentioned this to Kamalji, his reply was, “Too late. I am too tired by this film. I like to move on.” However, the ardent lovers of the film will keep on expecting.
We have had very few examples of feature length avant-garde films in the arena of world cinema. The prominent ones among them were made mostly by Alejandro Jodorowsky. Even considering those, ‘Om Dar Ba Dar’ is unique and Indian to the core. Kamalji does not like to call it an avant-garde film however. In his opinion, “Avant-garde is a technical term applied to a different movement. In Om Dar Ba Dar, I was reacting to the parallel cinema of that time.” He acknowledges Surrealist and Dadaist influences in it. It is certain that if someday, an Indian film theory is developed; this cult classic will receive a special mention as a pioneer in Indian avant-garde, a very deserving accolade for this film and for its creator.

P.S : A digitally restored an subtitled version of this film was released by PVR Cinemas on January 17, 2014, in the metro cities. This release was met with an significant response among film lovers 
References:

1. http://artviewblog.wordpress.com/2011/11/17/kamal-swaroops-interview/


 This article was first published in movie site Madaboutmoviez
http://madaboutmoviez.com/2012/07/08/dar-b-dar-pioneer-indian-avant-garde/